‘আজ একজন রিকশাওয়ালাও মনে করেন এসপি বাবুল আক্তার খুনি। কিন্তু এর অন্তরালে কি ঘটে যাচ্ছে তা কেউ জানতে পারছে না। মামলার তদন্তকালেই তাকে খুনি বানানো হচ্ছে। অথচ তিনি খুনি কি না তা এখনো প্রমাণ হয়নি। যদিও তা এখন অনেকের কাছে আর বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে বাবুল আক্তারকে চাকরিচ্যুত করা খুব জরুরি। যারা বাবুল আক্তারকে চায় না, ভিন্ন স্বার্থ চরিতার্থ করতে চান, তারা সবাই উঠে পড়ে লেগেছে।’
আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের শ্যালিকা শায়লা মোশাররফ নিনজা এসব কথা বলেন। বাবুল আক্তার ছুটিতে রয়েছেন নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘এর দায় তো পুলিশ সদরের, যা বলার পুলিশ সদরই বলতে পারবে, বাবুল আক্তার চাকরিতে নেই নাকি ছুটিতে।’
এদিকে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ৪০ দিন পার হতে চললেও সর্বশেষ কর্মস্থল পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেননি বাবুল আক্তার। তিনি কি ছুটিতে রয়েছেন নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন- এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে। যদিও এ ব্যাপারে শুরু থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে জল এত ঘোলা হয়েছে যে, কেউই নিজের নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাইছেন না। অন্যদিকে ঘটনার পর থেকে মিডিয়াবিমুখ এসপি বাবুলও নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। কারো সঙ্গেই কথা বলছেন না।
শায়লা মোশাররফ নিনজা জাগো নিউজকে আরো বলেন, ‘এমনভাবে বিষয়টি ছড়ানো হচ্ছে যেন খুনি বাবুল আক্তারই। কিন্তু তিনি (বাবুল আক্তার) কেন খুন করবেন? কাদের দিয়ে খুন করবেন? তা পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। এছাড়া তিনি চাকরিতে আছেন কিনা তাও জানানো হচ্ছে না।’
পুলিশ সদর দফতর এত সমালোচনার দায় এড়াতে পারে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দুটো বাচ্চার কথা কেউ চিন্তা করলো না। মা হারা বাচ্চা দুটির বাবাও যদি জেলে যায়, তবে ওদের কি হবে? সবাই যেন এজেন্ডা নিয়ে নেমেছে যে বাবুল আক্তার খুনি কিনা তা বিবেচ্য নয়, চাকরিটা খেয়ে দেয়াটা যেন জরুরি।’
‘কারা এসব করছে, কাদের মদদে করছে পুলিশ সদর দফতর এগুলো ভালো করেই জানে। আর মিডিয়ার লোকজন যেভাবে লিখছে, তা মানা যায় না। আবার সেসব প্রশ্নের উত্তরও আমরা দিতে পারছি না।’
শায়লা বলেন, ‘আমার বোন (মাহমুদা আক্তার মিতু) তো আর নেই। ও বাদে এখন আমাদের পরিবারে আমি, মা এবং বাবা। আমরা কেউই বিশ্বাস করি না মিতু আপু হত্যায় ভাইয়া (বাবুল আক্তার) কোনোভাবে জড়িত থাকতে পারে। যদি জড়িত থাকার কোনো পূর্ব লক্ষণ থাকতো, তাহলে সবার আগে আমরাই বুঝতাম। কিন্তু সবাই যে যার মতো বুঝে যাচ্ছে। যে যার (মিডিয়া) মতো লিখে যাচ্ছে। আর পুলিশ সদর দফতর পূর্বের ন্যায় নীরবতা পালন করছে।’
বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইজিপিকে বলুন। তিনি ভালো উত্তর জানেন বাবুলের চাকরি আছে কি নেই।’
তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) বিনয় কৃষ্ণ বালার সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যম পরিচিত এমন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (মিতু) খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত এই কর্মকর্তা (বাবুল আক্তার) এখন পর্যন্ত একবারও কর্মস্থলে আসেননি।
বাবুল আক্তার ছুটিতে, চাকরিচ্যুত নাকি তিনি নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার পক্ষে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। স্পষ্ট করাও সম্ভব নয়। এতটুকু বলতে পারি, ওই কর্মকর্তাকে (বাবুল আক্তার) চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি উত্তর দেননি। ফোন করা হয়েছে তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে এখনো ঝুলে আছে তার চাকরি থাকা না থাকার বিষয়টি।’
পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সদর দফতরে তার (বাবুল আক্তার) স্বাক্ষর করা পদত্যাগপত্র পৌঁছেছে। তবে তা এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
গত ৫ জুন (রোববার) সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
সেই মামলায় গত ২৪ জুন রাতে খিলগাঁও নওয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
জানা যায়, বাবুল আক্তারকে ডিবি কার্যালয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা না করা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ সদর দফতর। ওই ঘটনার পর থেকে মিডিয়াকে এড়িয়ে চলছেন বাবুল আক্তার। সুত্র : জাগো নিউজ
পাঠকের মতামত